হাদিসে গালিচা (বেসাত বা গামাম)
হাদিসে বেসাত বা গামাম সম্পর্কে মরহুম কাফআমী এবং আল্লামা মাজলিসি যা বর্ণনা করেছেন তাঁদের মতে হাদিসে বেসাত অর্থাৎ (হযরত আমির আল-মুমিনীন আলী (আঃ) একটি উড়ন্ত কালীন (কার্পেট) দ্বারা আসহাবে কাহাফের গুহায় যাত্রা করেছিলেন।) এবং এটি যিল হিজ্জা মাসের ২১ বা ২৭তম দিনে ঘটেছিল এবং এর ঘটনাটি, প্রয়াত মরহুম আরদাবিলির মতে নিম্নরূপ:
আবি জো’দা বলেন, আমি এক দিন বসরায় ছিলাম এবং আমি আনাস বিন মালিকের মজলিসে (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেবাকারি) প্রবেশ করি এ সময় একজন লোক উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আনাস! হে আল্লাহর রাসূলের সঙ্গী! এই কুষ্ঠ রোগের কারণ কি যা আমরা আপনার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। এমন কি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত যে মোমেনিন (ইমান্দারগণ) কুষ্ঠরোগ বা পাখোর রোগে আক্রান্ত হবেন না?
আনাস তাঁর মাথা নিচু করে ও চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয় আর বললেন: আমার জন্য এক সালেহ বান্দার দুআ কবুল হয়েছে!
সকল মানুষ সেই প্রবাহ নিয়ে প্রশ্ন করলেন কিন্তু আনাস তা বলতে লজ্জাবোধ করলেন। আর যখন তিনি মানুষের পীড়াপীড়ির সম্মুখীন হলেন, তখন তিনি হাদিসে বেসাত বা গামাম বর্ণনা করলেন এবং বললেনঃ
একদিন আল্লাহর রসূল (সঃ) উপহার হিসেবে একটি (কালিন) কার্পেট পেলেন।
আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমাকে ডাকলেন এবং বললেনঃ সেই দশজনকে (আবু বকর, উমর, তালহা, জুবায়ের, আবদুর-রহমান বিন আউফ এবং…) নিয়ে এসো। যখন তারা আসলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) আমির আল-মুমিনীন আলী (আঃ)কে বললেনঃ এই দশজনকে এই গালিচায় তুলে নিয়ে আসহাবে কাহাফের যিয়ারাত করিয়ে নিয়ে এস। তখন তিনি (সাঃ) আমাকে বললেনঃ হে আনাস! তুমিও ওদের সঙ্গে যাও এবং যাহা দেখবে ফিরে এসে আমাকে তাহা বলিবে।
যখন সকলে সেই গালিচায় উঠলেন, তখন আমির আল-মুমিনীন আলী (সা.) বাতাসকে উদ্দেশ্য করে বললেন: یا ریح احملینا و سیروا على برکه اللّه
হে বায়ু, আমাদের ওঠাও এবং আল্লাহর বরকতে আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যাও!
“বাতাস গালিচাটি আকাশে তুলে নিয়ে গেল এবং আমীরুল মুমিনীন (আঃ)-এর নির্দেশে মাটিতে না আসা পর্যন্ত আমাদেরকে বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসলো। অতঃপর আমীরুল মুমিনীন (আঃ) বললেনঃ তোমরা কি জানো এটা কোন দেশ?! আমরা বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর নবী এবং নবীর প্রতিনিধিই বেশি জানেন!
আমীরুল মুমিনীন (আঃ) বললেনঃ এটা (আসহাবে কাহাফ) গুহাবাসীদের দেশ।
সকলে উঠুন এবং তাদের (আসহাবে কাহাফ) কাছে গিয়ে সালাম জানাই।
আমরা যখন আসহাবে কাহাফদের গুহায় প্রবেশ করলাম, তখন প্রথমে আবু বকর, তারপর উমর এবং তারপর বাকি সাহাবীগণ গুহাবাসীদের সালাম দিয়ে বললেন: السلام علیکم یا اصحاب الکهف والرقیم!
তারপর আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, السلام علیکم و رحمه اللّه و برکاته أنا أنس خادم رسول خدا صلى الله علیه وآله یا اصحاب الکهف!
কিন্তু আমরা কেউ সালামের উত্তর শুনিনি।
তারপর আমীরুল মুমিনীন (আঃ) উঠে বললেনঃ السلام علیکم یا اصحاب الکهف والرقیم الذین کانوا من آیاتنا عجبا!
হঠাৎ আসহাবে কাহাফ (গুহার সাথী) সকলে একসাথে বলে উঠলোঃ و علیک السلام یا وصى رسول اللّه و رحمه اللّه و برکاته!
আমীরুল মুমিনীন (আঃ) বললেনঃ হে আসহাবে কাহাফ (গুহার সাথীগণ), তোমরা অন্যদের সালামের জবাব দাওনি কেন?!
তখন তাঁরা উত্তর দিলেনঃ হে নবী (সাঃ)-এর প্রতিনিধি! আমরা এমন একটি দল যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী এবং আল্লাহ আমাদের হিদায়াত বৃদ্ধি করেছেন এবং আমরাদের অনুমতি নেই কারো সালামের জবাব দেওয়ার যদি না সে ব্যক্তি নবী বা নবীর উত্তরসূরি না হয়। এবং আমরা আপনার সালামের উত্তর দিয়েছি কারণ আপনি আল্লাহর রসূলের অভিভাবক ও উত্তরাধিকারী।
আমীরুল মুমিনীন (আঃ) আমাদের বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ, তোমরা কি শুনেছ?
তাঁরা সকলেই বললঃ হ্যাঁ, হে আমিরুল মুমিনীন।
তারপর আমীরুল মুমিনীন (আঃ) সকলকে বললেনঃ সকলে গালিচায় উঠুন আমরা ফিরে যাই।
আমরা সকালে মদিনায় পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে নামায পড়লাম এ সময় আল্লাহর রাসূল আমার দিকে ফিরে বললেন: হে আনাস! তুমি যা দেখেছো এবং শুনেছো তা তুমি নিজেই বলবে না আমি তোমাকে বলব?
আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল, আপনার কথা বেশি মধুর। অতঃপর আল্লাহর রসূল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা ঘটেছিল তার সবই ব্যাখ্যা করলেন এবং বললেনঃ হে আনাস! যখন আমার চাচাতো ভাই আলী (আঃ) তোমাকে সাক্ষ্য দিতে বলবেন যে ঘটনা ঘটেছে, তুমি কি সাক্ষ্য দেবে?
আমি বললাম, জি দেব হে আল্লাহর রাসুল।
আনাস বলেন: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রস্থান এবং খিলাফত দখলের পর একদিন আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) আমাকে এক বিশাল সমাবেশে বললেনঃ হে আনাস! বেসাত (গালিচা) দিবসের ঘটনাটি বলো।
কিন্তু আমি বললামঃ হে আলী! আমি বুড়ো হয়ে গেছি আর সব ভুলে গেছি।
আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) বললেনঃ আপনি যদি আল্লাহর রাসূলের শাহাদাত (সাক্ষী) লুকিয়ে থাকেন এবং হাদিস বলতে দুর্বল হন, আল্লাহ তা’আলা তোমার মধ্যে কুষ্ঠ রোগ ও তোমার দেহের মধ্যে আগুন এবং তোমার চোখে অন্ধত্ব সৃষ্টি করবে যাহাকে কখনও লুকাতে পারবে না।
আনাস বলেনঃ এমনকি আমি ওই সমাবেশ এখনও ত্যাগ করিনি আর সেই তিনটি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লাম।
শেষ পর্যন্ত আনাস এই তিনটি রোগে আক্রান্ত অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
তথ্যসূত্রঃ
১- উসুল আল-সিত্তা আশার, প্রি ১২৮
২- আল-খারাইজ ওয়াল জারায়েহ, খন্ড ২, প্রি ৮৩৬
৩- মানাকিব আলে আবি তালিব, ইবনে শাহ্ আশোব, প্রি ৩৩৮
৪- বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৩০, প্রি ১৩৬
অনুবাদঃ ডাঃ জয়নুল আবেদিন