মোবাহেলা, মহানবী (স.) এর আহলে বাইত (আ.) এর মহাত্ত্ব প্রমানেরন অন্যতম দলিল

জিলহজ্ব মাসের ২৪ তারিখ; এমন একদিন যেদিন নাজরানের খ্রিষ্টানরা হযরত মুহাম্মাদ (স.) কর্তৃক উপস্থাপিত দলিল না মেনে মোবাহেলায় সম্মতি দেয় এবং যেদিন আহলে বাইত (আ.) এর মাহাত্ত্ব ও তাৎপর্য সমগ্র বিশ্ববাসীর সম্মুখে প্রমাণিত হয়।
মোবাহেলার আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ:
মোবাহেলা (بَهل) শব্দ হতে সংগৃহীত হয়েছে, যা কোন কিছুকে মুক্ত করে দেয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মোবাহেলা অর্থ হচ্ছে পরস্পরের প্রতি অভিসম্পাত করা। মোবাহেলা এমন ভাবে অনুষ্ঠিত হয় যে, একদল ব্যক্তি ধর্মগত কোন বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার পর এক স্থানে সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়ায় রত হয়। অতঃপর তাঁর নিকট মিথ্যাবাদীদেরকে প্রতিপন্ন ও তাদেরকে শাস্তি দানের দাবী জানায়।
মোবাহেলার ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর মোবাহেলা ১০ম হিজরী’র ২৪শে জিলহজ্ব অনুষ্ঠিত হয়। মহানবী (স.) একটি পত্র প্রেরণ মারফত নাজরানের খ্রিষ্টানদেরকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু নাজরানের অধিবাসীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে আদৌ প্রস্তুত ছিল না, এ কারণে তারা নিজেদের পক্ষ হতে একটি প্রতিনিধি দল মদিনায় প্রেরণ করে।
মহানবী (স.) তাদের সাথে কয়েকদিন আলোচনার পর যখন বুঝতে পারলেন যে, তারা তাদের একগুয়েমীতে অবশিষ্ট থাকবে এবং আদৌ সত্য বিষয়কে মানতে রাজী নয়, তখন মহান আল্লাহর নির্দেশে তাদেরকে ‘মোবাহেলা’র আহ্বান জানালেন। কিন্তু নাজরানের প্রতিনিধি দল মহানবী (স.) কে এবং তাঁর সাথে মোবাহেলায় অংশ নিতে আসা ব্যক্তিত্বদেরকে দেখার পর তারা মোবাহেলা হতে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইসলামি শাসন ব্যবস্থার অধিনে নিজেদের ধর্মে অবশিষ্ট থাকার অনুমতি চাইলেন।
ভৌগলিক অবস্থান:
নাজরান অঞ্চলটি ৭০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। যা হেজাজ এবং ইয়েমেনের সীমান্তে অবস্থিত। ইসলামের প্রাথমিক যুগে হেজাজের মধ্যে এটাই ছিল একমাত্র খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এলাকা। যে অঞ্চলের লোকজন বিভিন্ন কারণে মূর্তি পূজা হতে বিরত থেকে হযরত ঈসা মাসীহ (আ.) এর ধর্মকে গ্রহণ করেছিলেন।
ইসলামের প্রতি দাওয়াত:
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (স.) নিজেদের রেসালতের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশ ও ভূখণ্ডে পত্র অথবা প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। যাতে এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নিকট একত্ববাদের বাণী পৌঁছে দিতে পারেন। এরই ভিত্তিতে নাজারানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রী ‘আবু হারেসাহ’র নিকটও একটি পত্র প্রেরণ মারফত নাজরানের খ্রিষ্টানদেরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন।
নাজরানের পুরোহিত বরাবর লেখা মহানবী (স.) এর ঐতিহাসিক চিঠি:
মহানবী (স.) এর পক্ষ থেকে নাজরানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রী বরাবর যে চিঠি প্রেরিত হয়েছিল তা নিম্নরূপ:
“ইবরাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুব এর প্রভুর নামে, (এ পত্র) আল্লাহর নবী মুহাম্মাদে’র পক্ষ থেকে নাজরানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রীর প্রতি। ইবরাহিম, ইসহাক ও ইবরাহিমের প্রভুর প্রশংসা করে আপনাদেরকে বান্দাদের উপাসনা হইতে আল্লাহর উপাসনার প্রতি আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আপনাদেরকে এই মর্মে আহ্বান জানাচ্ছি যে, আল্লাহর বান্দাদের অধীন হতে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর অধীনে আসুন। যদি আমার এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেন তবে আপনারা ইসলামি হুকুমতকে কর প্রদানে বাধ্য থাকবেন (যাতে এ করের বিনিময়ে আপনাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়)। অন্যথায় আপনাদের প্রতি আমি সতর্কবাণী উচ্চারণ করছি।
নাজরানের খ্রিষ্টানদের প্রতিক্রিয়া:
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর পত্র বহনকারী প্রতিনিধি দলটি উক্ত পত্রটি নাজরানের শীর্ষস্থানীয় পাদ্রীকে প্রদান করলে তিনি একটি কমিটি গঠন করে তাদের সাথে পরামর্শ শুরু করেন। তাদের মধ্যে একজন –যিনি অন্যদের তুলনায় ছিলে অধিক বুদ্ধিমান- বললো: আমরা আমাদের পূর্ববর্তীদের হতে বহুবার শুনেছি যে, নবুয়্যতী ধারা হযরত ইসহাক (আ.) এর বংশ হতে হযরত ইসমাঈলের বংশধারায় স্থানান্তরিত হবে। আর এটা অসম্ভব নয় যে মুহাম্মাদ –যিনি হযরত ইসমাঈল (আ.) এর সন্তান-ই হচ্ছেন সেই নবী।
অতএব, উক্ত পরামর্শ সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হল যে, নাজরান বাসীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল মদিনায় যেয়ে মুহাম্মাদ (স.) এর সাথে নিকট হতে সাক্ষাত করে তার নবুয়্যতের স্বপক্ষে দলিলাদি পর্যালোচনা করবে।
নাজরানের প্রতিনিধি দলের সাথে হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর কথোপকথন:
মদিনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনায় আল্লাহর রাসূল (স.) নাজরানের প্রতিনিধি দলকে একত্ববাদের উপাসনার প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু তার নিজেদের দাবীর উপর অনঢ় থেকে পিতা ব্যতীত হযরত ঈসা মসীহ (আ.) এর জন্মগ্রহণের বিষয়টিকে হযরত ঈসা (আ.) এর প্রভু হওয়ার স্বপক্ষে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে।
এমন সময় ওহীর ফেরেশতা হযরত জীবরাঈল (আ.) অবতীর্ণ হয়ে মহানবী (স.) এর নিকট এ বাণী পৌঁছালেন যে, ‘ নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসা’র দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মত, তাকে মহান আল্লাহ্ মাটি হতে সৃষ্টি করেছিলেন…’। (সূরা আলে ইমরান: ৫৯)
এ আয়াতে হযরত ঈসা (আ.) এর জন্মের সাথে হযরত আদম (আ.) এর জন্মের সাদৃশ্য হওয়ার কথা উল্লেখ করে এ বিষয়টি স্মরণ করে দিয়েছেন যে, মহান আল্লাহ হযরত আদম (আ.) কে পিতা ও মাতা ব্যতীতই মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। অতএব, যদি পিতা না থাকার বিষয়টি হযরত ঈসা (আ.) এর প্রভু হওয়ার দলিল হয়ে থাকে তবে হযরত আদম (আ.) এ পদের ক্ষেত্রে অধিকতর যোগ্য। কেননা তাঁর না পিতা ছিল, না মাতা।
তাদের সামনে এমন যুক্তিসম্মত দলিল উপস্থাপনের পরও তারা তুষ্ট হল না। অতঃপর মহান আল্লাহ স্বীয় নবীকে মোবাহেলার নির্দেশ দিলেন। যাতে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত ও মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন হয়।
মোবাহেলার আয়াত:
মহান আল্লাহ মোবাহেলার আয়াত অবতীর্ণ করার পূর্বে বেশ কয়েকটি আয়াতে হযরত ঈসা (আ.) এর জন্মের বিষয়টির বিবরণ তুলে ধরেন এবং তাদের সম্মুখে যুক্তিসম্মত দলিল উপস্থাপন করে তাদেরকে ন্যায়নিষ্ঠার সাথে এ বিষয়ে বিবেচনার প্রতি আহ্বান জানান। এ কারণেই মহানবী (স.) তাদেরকে অবগত করার নিমিত্তে প্রথমে স্পষ্ট ও বুদ্ধিবৃত্তি ভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন করেন। অতঃপর যখন তাঁর স্পষ্ট দলিলাদি মানতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়ে তাদের একগুয়েমিতে অনঢ় রইলো, তখন আল্লাহর নির্দেশে তিনি মোবাহেলার সিদ্ধান্ত নিলেন।
মহান আল্লাহ সূরা আলে ইমরানের ৬১ নং আয়াতে এভাবে বলেছেন:
فَمَنْ حَآجَّکَ فِیهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءکَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءکُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءکُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَکُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةَ اللّهِ عَلَى الْکَاذِبِینَ.
অনুবাদ: “অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী”। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ৬১)

মোবাহেলা সম্পর্কে নাজরানের প্রতিনিধি দলের দৃষ্টিভঙ্গি:
ইসলামি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, মোবাহেলার বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার পর নাজরানের প্রতিনিধি দল মহানবী (স.) এর নিকট সময় চাইলেন যাতে এ ব্যাপারে অধিক চিন্তা করতে পারে এবং নিজেদের বয়োঃবৃদ্ধদের সাথে পরামর্শ করতে পারে। অতঃপর তারা উক্ত পরামর্শ সভায় এ সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, যদি মুহাম্মাদ (স.) অনেক লোকজন নিয়ে চিকার চেচামেচী করতে করতে মোবাহেলার ময়দানে উপস্থিত হয় তবে তাঁর সাথে মোবাহেলা কর এবং ভয় পেয়ো না। কেননা এমতাবস্থায় সে সত্য পথে নয় এবং এ কারণেই সে লোকবলের আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু যদি নিজের সন্তান-সন্ততি ও ছোট শিশুদেরকে নিয়ে মোবাহেলার স্থানে উপস্থিত হয় তাহলে বুঝবে সে সত্যিকারে আল্লাহর নবী এবং এক্ষেত্রে তোমরা তার সাথে মোবাহেলা থেকে বিরত থাকবে, কেননা এমতাবস্থায় তার সাথে মোবাহেলা করা বিপজ্জনক।
মোবাহেলার স্থানে কি ঘটেছিল?
পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মহানবী (স.) ও নাজরানের প্রতিনিধি দলটি মোবাহেলার জন্য নির্ধারিত স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হল। নাজরানের প্রতিনিধিরা যথাস্থানে পূর্বে পৌঁছেছিল। তারা দূর হতে দেখতে পেল যে, মহানবী (স.) ইমাম হুসাইন (আ.) কে কোলে নিয়ে ও হাসান (আ.) এর হাত ধরে অগ্রসর হচ্ছেন এবং তাঁর সাথে হযরত আলী ও হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.)ও রয়েছেন। তখন মহানবী (স.) তাঁদেরকে এ কথাই বলছিলেন যে, যখনই আমি দোয়া করব তোমরা আমিন বলবে।
নাজরানের খ্রিষ্টানরা এ দৃশ্য অবলোকন করে প্রচন্ড ভয় পেল। আর যেহেতু মহানবী (স.) নিজের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্বদেরকে মোবাহেলার ময়দানে এনেছিলে সেহেতু তাদের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, মুহাম্মাদ (স.) নিজের দাবীর উপর পূর্ণ ঈমানের অধিকারী। কেননা এমনটি না হলে তিনি কখনই নিজের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্বদেরকে নিয়ে মোবাহেলার ময়দানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে ঐশি আযাবের মুখোমুখি করতেন না। সুতরাং তারা মোবাহেলা করা হতে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিয়ে আপোস করার প্রস্তাব দিল।

উক্ত সন্ধির ব্যাপারে আবু হারেসার বক্তব্য:
নাজরানের প্রতিনিধি দল মহানবী (স.) কে মোবাহেলার জন্য বদ্ধ পরিকর দেখে সন্ত্রস্ত হল। আবু হারেসা –যে ছিল নাজরানের পাদ্রীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ও সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী) বলেন: যদি মুহাম্মাদ সত্যের উপর না থাকত তবে কখনই এমন মোবাহেলায় অংশগ্রহণের সাহস পেত না। যদি সে আমাদের সাথে মোবাহেলা করে তবে এক বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই পৃথিবীতে আর কোন খ্রিষ্টান অবশিষ্ট থাকবে না।
অন্য একটি রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে: আমি যে (নূরানী) চেহারাগুলো দেখতে পাচ্ছি, যদি তারা আল্লাহর নিকট চায় পাহাড়গুলোকে তাদের স্বস্থান হতে উপড়ে ফেলতে তবে তারা তা পারবে। সুতরাং তাদের সাথে মোবাহেলা করো না। কেননা তাদের সাথে মোবাহেলা করলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং পৃথিবীতে একজন খ্রিষ্টানও অবশিষ্ট থাকবে না।

মোবাহেলার পরিণতি:
নাজরানের প্রতিনিধি দলের প্রধান আবু হারেসা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর সমীপে উপস্থিত হয়ে বললো: ‘হে আবুল কাসেম! (মহানবী (স.) এর উপাধি বিশেষ) আমাদের সাথে মোবাহেলা না করে এমন শর্তের বিনিময়ে আপোস কর, যা দেয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে’।
অতঃপর মহানবী (স.) কর দেয়ার শর্তে তাদের সাথে আপোশ করলেন। কর হিসেবে প্রতি বছর ২ হাজার হুল্লাহ –যার প্রতিটির মূল্য ছিল ৪০ দিরহাম- তারা প্রদান করবে বলে ধার্য্য করা হল। আর যদি কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয় তবে ৩০টি যেরা, ৩০টি বর্ষা এবং ৩০টি ঘোড়াকে কর্য হিসেবে প্রদান করবে বলে নির্ধারিত হল।

মোবাহেলা; মহানবী (স.) এর দাওয়াতের সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ:
নাজরানের খ্রিষ্টান প্রতিনিধি দলের সাথে মহানবী (স.) এর মোবাহেলার বিষয়টি তাঁর (স.) সত্যপন্থী ও সঠিক পথের অনুসারী হওয়ার প্রমাণ স্বরূপ। কেননা, প্রথমতঃ মোবাহেলার প্রস্তাবটি স্বয়ং মহানবী (স.) এর পক্ষ হতে হওয়াটাই তাঁর দাবীর সত্যতার অন্যতম সাক্ষ্য স্বরূপ। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তি নিজের সত্যতার উপর দৃঢ় ঈমান ও বিশ্বাসের অধিকারী না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সে মোবাহেলার পথে পা বাড়ায় না। কারণ মোবাহেলার পরিণতি খুবই ভয়ংকর এবং মিথ্যাবাদীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ মহানবী (স.) এমন কিছু ব্যক্তিত্বকে সাথে নিয়ে মোবাহেলার ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন যাদেরকে তিনি অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালবাসতেন এবং এদের চেয়ে প্রিয় তার কাছে আর কেউ ছিল না। আর এ বিষয়টি মহানবী (স.) এর দাওয়াতের সত্য হওয়ার প্রতি তাঁর সুদৃঢ় ঈমানের বিষয়টির প্রমাণ বহন করে। এ কারণেই তিনি প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে শুধুমাত্র নিজে নয় বরং স্বীয় পরিবারকে নিয়ে মোবাহেলার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। কেননা তিনি জানতে যে, মিথ্যাবাদীই পরাজিত হবে এবং তাঁর ও তাঁর পরিবার কোন ক্ষতির সম্মুখীন হবে না।
শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের মুফাসসির ও মুহাদ্দিসরা এ বিষয়টিকে স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছেন যে, মোবাহেলার আয়াতটি মহানবী (স) এর আহলে বাইত (আ.) এর ফজিলতে নাযিল হয়েছে। আর মহানবী (স.) শুধুমাত্র তার দুই সন্তান হাসান ও হুসাইন (আ.), তাঁর কন্যা ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) ও তাঁর জামাতা হযরত আলী (আ.) কে সাথে নিয়ে মোবাহেলার ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সুতরাং আয়াতে উল্লেখিত (أبنائنا) শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র হাসান এবং হুসাইন (আলাইহিমাস সালাম) কে বোঝানো হয়েছে, (نسائنا) শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র ফাতেমা (সা. আ.) কে বোঝানো হয়েছে এবং (أنفسنا) শব্দ দ্বারা শুধুমাত্র হযরত আলী (আ.) কে বোঝানো হয়েছে। আর এ আয়াতে হযরত আলী (আ.) কে মহানবী (স.) এর জীবন ও নাফস হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে।

আহলে বাইত (আ.) শানে দু’টি রেওয়ায়েত:
উয়ুনু আখবারুর রেজা গ্রন্থে আব্বাসীয় খলিফা মা’মুন কর্তৃক আহুত এক সভা সম্পর্কে এভাবে উল্লেখিত হয়েছে যে, ইমাম আলী ইবনে মুসা আর রেজা (আ.) বলেছেন: মহান আল্লাহ মোবাহেলার আয়াতে নিজের বান্দাদের মধ্য হতে পাক ও পবিত্র বান্দাদেরকে পরিচিত করিয়েছেন। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর মহানবী (স.) আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন (আলাইহিমুস সালাম) কে সাথে নিয়ে মোবাহেলা প্রাঙ্গনে উপস্থিত হন। আর এ আয়াতটি আহলে বাইত (আ.) এর জন্য এমন একটি শ্রেষ্ঠত্ব যাতে তাঁদেরকে কেউই অতিক্রম করতে পারেনি এবং এমন একটি মহত্ত্ব যা ইতিপূর্বে কোন মানবের ভাগ্যে জোটেনি এবং এমন একটি মর্যাদা যার দ্বারা ইতিপূর্বেই কেউই সৌন্দর্য মণ্ডিত হয় নি।

গায়াতুল মারাম গ্রন্থে সহীহ মুসলিমের বরাত দিয়ে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা মুয়াবিয়া, সায়াদ বিন আবি ওয়াকাসকে বললো: কেন আবু তোরাব (আলী (আ.) কে গালী-গালাজ কর না?! সে বললো: যখন থেকে তিনটি জিনিস আমার স্মরণে এসেছে –যে তিনটি জিনিস আল্লাহর রাসূল (স.) হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে বলেছিলেন- তখন থেকে আমি এ কাজ হতে নিজেকে বিরত রেখেছি। প্রথমটি হল; যখন মোবাহেলার আয়াত নাযিল হয় তখন মহানবী (স.) শুধুমাত্র ফাতেমা, হাসান, হুসাইন ও আলীকে ডেকে বললেন: (ألهم هؤلاء أهلی) হে আল্লাহ! এরাই আমার কাছের লোক…

Reviews

35 %

User Score

1 ratings
Rate This

Sharing

Leave your comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।