সফল তবলিগের পূর্বশর্ত কি?

হযরত আমিরূল-মুমিনিন আলী (আ.) বলেছেন, “رَحِمَ اَللَّهُ اِمْرَءً عِلْمَ مِنْ أَیْنَ وَ فِی أَیْنَ وَ إِلَی أَیْنَ”
ধর্মীয় তবলিগকারিদের বিশেষ উপায়ে দর্শকদের চেনা এবং দর্শক সচেতনতার অতি প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই ক্ষেত্রের দর্শক ব্যক্তি এবং সমষ্টিগত উভয়ই একবচন এবং বহুবচন।
ধর্মীয় তবলিগকারিদের সঠিকভাবে ব্যক্তির মুখোমুখি হওয়ার জন্য শ্রোতা জ্ঞান নামে একটি জ্ঞানের ভীষণ প্রয়োজন যা মনোবিজ্ঞানের অধীনে রয়েছে, যাতে তবলিগকারি ব্যক্তির সঠিকভাবে মুখোমুখি হতে পারেন।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য, তবলিগকারিদের প্রয়োজনঃ পরিচ্ছন্নতা, বাকপটু ভাব, শব্দের সঠিক নির্বাচন, যুক্তি ও তর্ক করার ক্ষমতা, শক্তিশালী শারীরিক ভাষা ইত্যাদি। ব্যক্তির মুখোমুখি হওয়ার সময় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করাও প্রয়োজন।
প্রকৃতপক্ষে, শ্রোতা তার ব্যক্তিত্বের বৃদ্ধি অনুসারে, তার মতামত প্রকাশে ব্যাপকতা অর্জন করে বা তার মতামত প্রকাশে ব্যাপকতার অভাব মনে করে। অতএব, তবলিগকারিদের উচিত শ্রোতাদের প্রচার মনোবিজ্ঞানের মাত্রাগুলিতে মনোযোগ দেওয়া।
মজলিস বা তবলিগে সমাজবিজ্ঞানের বহু গুরুত্ব রয়েছে। ধর্মপ্রচারকদের তাদের শ্রোতাদের সমাজের সদস্য এবং একটি দলের কার্যকর সদস্য হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।
মানবজাতির জন্য পবিত্র কোরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “قُلْ إنَّمَاعَعزُكُمْ بوَاحَدَةٍ اَنْ تقومووا للَّهُ متشنی وفرادی” অর্থাৎ সমষ্টিকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সম্মিলিত বতলিগ ব্যক্তিগত তবলিগের চেয়ে অগ্রাধিকার।
অবশ্যই, এর অর্থ এই নয় যে স্বতন্ত্র তবলিগের মূল্য কম। বরং ধর্মীয় প্রচারকদের উচিত যে পরিবেশে অবস্থান করছেন সেই পরিবেশ অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে বা সম্মিলিতভাবে তবলিগ করা। সম্মিলিত তবলিগে, জনগণের গড় চিন্তা আবিষ্কার করা উচিত এবং এমন পরিস্থিতিতে, বিখ্যাত, নির্দিষ্ট এবং গৃহীত তথ্য ধর্মপ্রচারকদের সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ধর্মপ্রচারকদের সামনে যে সমাজ আছে তাকে খুব ভালোভাবে জানা উচিত। কারণ বহু ধর্মপ্রচারকদের ব্যর্থতার কারণ হল তাঁদের দ্বারা সমাজের সঠিক বিশ্লেষণ না করা। আসলে, ধর্মপ্রচারকদের এক মানসিক গঠনের ভিত্তিতে তবলিগ করা উচিত নয়। কারণ প্রতিটি পরিবেশে প্রবণতা, অন্তর্দৃষ্টি,ক তাঁদের কাজ কর্ম ও প্রতিক্রিয়ার ধরন ভিন্ন।
এছাড়াও, আমরা বর্তমানে ‘প্রজন্মগত দোষ বা মিশ্রিতপ্রজন্ম’ নামক একটি ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি, এবং এটি তবলিগের ক্ষেত্রেও বিবেচনা করা উচিত। নতুন প্রজন্ম থেকে আমদানি করা বিশ্লেষণ গ্রহণযোগ্য নয় যেহেতু এই সব বিশ্লেষণগুলি পশ্চিম থেকে আমদানি করা হয় যা শিয়া সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। উদাহরণস্বরূপ, তরুণ শিয়ারা আধ্যাত্মিক এবং পবিত্র বিষয়গুলি মেনে চলে এবং আগ্রহী। শিয়া সমাজ কিছু ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় নিয়ম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও তার ঐতিহ্যের প্রতি মনোযোগ দেয় এবং কিছু মতামত তার জন্য ম্লান হতে পারে, তবে বর্তমানে বেশিরভাগ মতামতেরই সম্মান রয়েছে এই সমাজের মানুষের জন্য। উদাহরণস্বরূপ, যদি কিছু শিয়া যুবকরা কিছু ধর্মীয় নিয়ম অনুসরণ না করে থাকে, তবে তারা আইম্মাএ আতহার (আ.)-এর প্রতি আগ্রহী এবং তাঁদের প্রতি বিশ্বাস করে এবং মুহাররম ও আযাদারী তাদের জন্য সম্মানজনক।
ধর্মপ্রচারকদের অবশ্যই নতুন প্রজন্মের সাথে একটি কমন বক্তৃতা খুঁজে বের করতে হবে যেমন কোরআনে উল্লেখ্য আছেঃ «قُلْ یَا أَهْلَ الْکِتَابِ تَعَالَوْا إِلَی کَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَیْنَنَا وَبَیْنَکُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِکَ بِهِ شَیْئًا وَلَا یَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ»।
যেমন আজকের কমন বক্তৃতার বিষয় হল ন্যায়, স্বাধীনতা, সৌন্দর্য ইত্যাদি। এবং একজন সফল তবলিগকারি ধর্মপ্রচারক হলেন সেই ব্যক্তি যিনি তবলিগের পরিবেশে থাকার মাধ্যমে এই কমন বক্তৃতা তুলে ধরেন।

Reviews

84 %

User Score

6 ratings
Rate This

Sharing

Leave your comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।