ইমাম হাসান (আঃ) এর দস্তরখান সম্পর্কে ঘটনা
আরবি মাসের ২২ জামাদিউস সানির দিনে ইমাম হাসান (আঃ)-এরদস্তরখান কেন সাজানো হয় এবং মু’মিনিন্দের বিশেষভাবে খাওয়ানো হয়?
এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে এটা জানা দরকার যে, মু’মিনিন্দের খাওয়ানো ইসলামের অন্যতম আদব ও মহৎ নৈতিকতা। বিচ্ছিন্নতার পার্থক্য ছাড়াই কাউকে খাওয়ানো সর্বোত্তম আমল এবং শরীয়াতে ও এই কাজটি জায়েয এবং গ্রহণজগ্য। এটা আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল এবং ইমাম (আঃ)দের দৃষ্টিতে ও খুবই প্রিয় কাজ। কুরআন ও হাদীসে এটাকে অত্যন্ত উৎসাহিত করা হয়েছে। ভোজ দেওয়া, আতিথেয়তা এবং খাবার খাওয়ানো নবী ও ইমামগণের একটি চমৎকার ঐতিহ্য ছিল।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রথম ব্যক্তি যিনি পৃথিবীতে আতিথেয়তার আচার জারি করেছেন। কখনো একা না খাওয়া তাঁর অভ্যাস ছিল, এবং প্রতিটা খাবারের সময় সে তাঁর সাথে খাওয়ার জন্য অতিথি খুঁজতেন। পবিত্র কুরআনে হযরত ইব্রাহিম (আঃ)এঁর আতিথেয়তা সম্পর্কে এসেছে: {وَلَقَدْ جَاۗءَتْ رُسُلُنَآ اِبْرٰهِيْمَ بِالْبُشْرٰي قَالُوْا سَلٰمًا قَالَ سَلٰمٌ فَمَا لَبِثَ اَنْ جَاۗءَ بِعِجْلٍ حَنِيْذٍ}[ھود: 69]
ইমাম হাসান (আঃ) এর দস্তরখান সম্পর্কে ঘটনাঃ
মদীনায় খুব বিখ্যাত ছিল- এক দিন ইমাম হাসান (আ)এর কাছে এক ব্যক্তি অতিথি হয়ে আতিন। তিনি খেতে বসলে এক টুকরো খেতেন আর এক টুকরো বাঁচাতেন।
ইমাম হাসান (আঃ) বললেনঃ তাহলে আপনি বাল বাচ্চা দার?
তিনি বললেনঃ না! কিন্তু আমি এক ব্যক্তিকে মসজিদে শুকনো রুটি খেতে দেখেছি। আমি তাকে সাহায্য করতে চাই…
ইমাম হাসান (আঃ) বললেনঃ ভাই, সে আমার বাবা হযরত আলী (আঃ) – এটাই তাঁর জীবনের রুটিন।
আমরা, (আহলে বাইত (আঃ)) বিশ্বকে যা খাওয়াই তা ভিন্ন এবং আমরা যা আমাদের জীবনযাপন করতে খাই সেটি ভিন্ন – আল্লাহ পাক আমাদের জন্য পরকালে বরকতের একটি দস্তরখান প্রস্তুত করে রেখেছেন।
তবে ইমাম হাসান (আঃ) এঁর সুন্নত, রেওয়ায়েত এবং ঐতিহ্য ছিল সারা বছর তাঁর দস্তরখান গরিব, দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের জন্যে বিছান থাকতো এবং তিনি সকল কে নিজে হাতে খাওয়াতেন। ইমাম হাসান (আঃ) ভীষণ দানশীল ছিলেন তাই তাঁকে কারিমে “দানবীর” আহলে বাইত (আঃ) বলা হত।
মদীনায় আহলে বাইতের দানবীর, ইমাম হাসান (আঃ) এঁর বিখ্যাত দস্তরখানের স্মরণে, আহলে বাইতের ভক্তরা প্রতি বছর জামাদিউস-সানির ২২ তারিখে ইমাম হাসান (আ.)-এর নামে দস্তরখানকে অত্যন্ত সম্মান এবং ভক্তিভরে সাজিয়ে থাকেন আর সকলকে খাওয়ার দাওয়াত দেন।
যেহেতু ইমাম হাসান (আঃ) এর আ’বা বা চাদর সবুজ রঙ্গের ছিল তাই কেউ কেউ এই দস্তরখানকে সবুজ খাবার ও সবুজ কাপড় দিয়ে সাজান।
অনুবাদঃ মাওলানা ডাঃ জয়নুল আবেদিন