সৌদির নতুন সিরিজ “মুয়াবিয়া” সম্পর্কে আপনি কী জানেন?

সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন আরব সিরিয়ালাইজেশনের নতুন রাউন্ড শুরু হচ্ছে এবং “মুয়াবিয়া” কে এর বিশিষ্ট প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, জনসাধারণের মানসিকতা নিজের মতো তৈরি করা এবং ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা হল প্রধান লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি।
সেই অনুযায়ী, আমরা মিডিয়া কার্যকলাপের একটি নতুন যুগের মুখোমুখি; এমন একটি যুগ যেখানে ছবি, মিডিয়া, অনুষ্ঠান এবং সিরিজকে কেবল অবসর এবং বিনোদনের সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, বরং দর্শকদের চিন্তাভাবনা পরিচালনার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অবশেষে, দুবার স্থগিত এবং বিরতির পর, সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের শুরুতেই MBC নেটওয়ার্কে “মুয়াবিয়া” ধারাবাহিকটি সম্প্রচারিত করা হয়।
“মুয়াবিয়া” এমন একটি ধারাবাহিক যা নির্মাণের পর থেকেই অনেক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা জাগিয়ে তুলেছে।
“মুয়াবিয়া” ধারাবাহিকটি ইরাকের মতো কিছু শিয়া দেশে সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি বলা হচ্ছে যে আল-আজহারের মতো সুন্নি প্রতিষ্ঠানগুলি এই সিরিজের বিষয়বস্তুর সমালোচনা করেছে এবং এর ঐতিহাসিক আখ্যান সন্দেহের মুখে পড়েছে।
“মুয়াবিয়া”, যেমনটি এর নাম থেকেই বোঝা যায়, উমাইয়া খিলাফতের প্রতিষ্ঠাতার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের একটি সচিত্র আখ্যান। মুয়াবিয়া এবং তার বাবা (আবু সুফিয়ান) এবং মা (হিন্দ বিনতে উতবাহ) সহ, তারা প্রাথমিক ইসলামী যুগের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অন্যতম। এবং প্রতিটি ব্যক্তি, যেকোন কারণেই হোক, নবুওয়তের যুগ এবং ইসলামের নবী (সাঃ) এর মৃত্যুর পরবর্তী বছরগুলির অন্যতম বিশিষ্ট এবং এমনকি প্রবণতা-নির্ধারক হিসাবে বিবেচিত হয়।
“মুয়াবিয়া” সিরিজটি সৌদি আরবের ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে তিউনিসিয়ায় নির্মিত হয়েছে। এই সিরিজটির পরিচালক হলেন তারিক আল-আরিয়ান, যিনি একজন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা, এবং চিত্রনাট্যকার খালেদ সালাহ, একজন মিশরীয় সাংবাদিক।
এই ধারাবাহিকের সময়কাল প্রায় ৩০ বছর অর্থাৎ তৃতীয় খলিফা উসমান ইবনে আফফানের হত্যাকাণ্ড থেকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাত পর্যন্ত।
দুঃখের বিষয় হল, এই সিরিজে, ইমাম আলী (আঃ), ইমাম হাসান (আঃ) এবং ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর মুখমণ্ডল প্রদর্শিত হয়েছে এবং এতে সৌদি আখ্যান সহ একটি ঐতিহাসিক-ধর্মীয় নাটকই দেখানো হয়েছে।
সৌদি আরব এই সিরিজটি দুই বছর ধরে সম্প্রচার করার চেষ্টা করে কিন্তু বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শিয়া ও সুন্নি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বিরোধিতার কারণে সেটি প্রচার করতে পারেনা এবং সৌদি আরব এই বিষয়টিকে সিরিজ প্রচার না করার অন্যতম কারণ হিসেবে ঘোষণা করে ছিল।
ইতিমধ্যে, রাজনৈতিক জল্পনা-কল্পনাও ছিল; “মুয়াবিয়া” সম্প্রচার উপেক্ষা করার কারণ হিসেবে তেহরান-রিয়াদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের পুনরুজ্জীবনের কথাও বলা হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সিরিয়ার চার পাসে (শাম অঞ্চলে) নতুন নতুন ঘটনার সংঘটন, “মুয়াবিয়া” ধারাবাহিকটির সম্প্রচারের রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক তাৎপর্য তুলে ধরে।
সেইজন্যই, কিছুদিন থেকে, সৌদি আরবের এই সিরিজ সম্প্রচারের পদক্ষেপ সম্পর্কে শৈল্পিক, ঐতিহাসিক, মিডিয়া, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণের বন্যা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্লেষক উল্লেখ করেছেন যে “মুয়াবিয়া” কেবল একটি নাটকীয়, বিনোদনমূলক বা সিনেমাটিক কাজ নয়; বরং, এটি সৌদি আরবের মিডিয়া এবং রাজনৈতিক কৌশলের দিকে একটি দিকনির্দেশনামূলক এবং বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ। দেশটি এখন শিয়া ও সুন্নি দেশগুলির মধ্যে বর্তমান ধর্মীয় দ্বন্দ্বকে একটি ঐতিহাসিক পটভূমিতে একটি নাটক সিরিজের আকারে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে এবং এই অঞ্চলের ধর্মীয় দ্বন্দ্বের শিকড় ইসলামের প্রাথমিক যুগে পৌছে দিতে চায়।
তুরস্কের মত রিয়াদও এবার নতুন শাসকদের নির্দেশনায় এবং সম্ভবত তাদের নতুন পরিচয় পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়ায়, শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করে এবং ইসলামী ইতিহাসের নিজস্ব পছন্দের আখ্যান উপস্থাপন করে এই অঞ্চলের দেশগুলিতে গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক পণ্যের ব্যবহারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। স্বাভাবিকভাবেই, এই ধরনের প্রযোজনা কেবল প্রাচীনকালের সাথে সম্পর্কিত একটি ঐতিহাসিক কাজ নয়, বরং এর সমসাময়িক প্রভাবও থাকবে।
“মুয়াবিয়া”-এর মতো ধারাবাহিক নির্মাণে এই প্রতিযোগীদের সমীকরণ, হিসাব-নিকাশ এবং শৈল্পিক, সাংস্কৃতিক এবং মিডিয়া নকশাগুলিকে যদি ভারী, কার্যকর এবং সু-নির্মিত প্রযোজনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ না করা হয়, তাহলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের আগুনে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় দ্বন্দ্বের আগুন আরও তীব্র হতে পারে।
অনুবাদঃ ডাঃ জয়নুল আবেদিন, নেপাল।

Reviews

90 %

User Score

1 ratings
Rate This

Sharing

Leave your comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।