
ইসলামী পরিবার কেমন হওয়া উচিত?
মানব জাতীকে আল্লাহ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মানব জাতির বংশ বিস্থার শুরু হয় হযরত আদম (আ:) থেকে। আর এই ধারাবাহিকতা কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। ইসলামী শরিয়ত সামনে রেখে আল্লাহর সমস্ত আদেশ ও নির্দেশ পালনের মাধ্যমে যে জীবন শুরু হয় সেটাই হচ্ছে ইসলামী পরিবার।
পরিবার গঠনের মূল কাঠামো হলো বিয়ে, বিয়ের জন্য প্রথমে পাত্র/পাত্রী নিবার্চন করতে হবে ইসলামী শরীয়ত মোতাবিক। আর এই নিবার্চন করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সে ক্ষেথে আপনি শুধু স্ত্রী নির্বাচন করেছেন না বরং একই সাথে আপনি একজন সন্তানের আর্দশ মা নিবার্চন করছেন। ইসলামী নির্দেশ মোতাবেক হচ্ছে-সৌন্দর্য্য ভালো বা সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন অথবা ইসলামী নির্দেশ পালনীয় হওয়া। উভয়ের মধ্যে ইসলামী জ্ঞান আমল, চরিত্র, ইসলামী সংস্কার ও সভ্যতা, ধর্মীয় সংস্কৃতি বিরাজমান থাকতে হবে। তাহলে এই পরিবারে আল্লাহর রহমত আসতে থাকবে, সাংসারিক সংঘাত দূর হবে এবং আল্লাহ তাদেরকে হেফাজত করবেন।
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-তিনি তোমাদের একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর থেকে তাঁর সহধর্মিণীও সৃজন করেছেন এবং এক জোড়া থেকে সর্বত্র পুরুষ ও নারীর বংশ পরস্পরায় বিস্তার লাভ করেছে।
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- নারীরা তোমাদের জন্য, তোমরাও তাদের জন্য। নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। মর্যাদার কারণ হল যে, পুরুষ স্ত্রীদেরকে মেহর দান করে, তাদের যাবতীয় ভরণ পোষণ বহন করে, ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ করে এবং শরিয়তের মৌলিক অনুষ্ঠানাদি পালনের জন্য তাকিদ দিয়ে থাকেন।
পুরুষরা স্ত্রীদের এমন ভাবে দেখাশুনা ও পরিচর্যা করেন, যেমন ভাবে শাসকগণ দেশের সাধারনের জন্য করে থাকেন। স্বামী স্ত্রীর ব্যবহার কেমন হওয়া উচিত এ ব্যপারে স্বয়ং আল্লাহপাক ইরশাদ করেন-তোমরা রমণীদের প্রতি উত্তম ব্যবহার কর, রমণীদের প্রতি উত্তম ব্যবহার করা আল্লাহর নির্দেশ, কেননা রমণীরা তোমাদের মা-বোন ও স্ত্রী বা কন্যা।
রাসুলে পাক (সা:) এরশাদ করেন-সেই ব্যক্তিই উত্তম যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করে। রাসুলে পাক (সা:) এরশাদ করেছেন-স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দিলে এটা তার জন্য সদকার সওয়াব হবে। রাসুলে পাক (সা:) এর কথা শুনে এক সাহাবী বললেন আমি এই হাদিস পালন করার ফলে পরিবারে অনেক শান্তি লাভ করি। পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য ছেলে-মেয়েদের আদব শিক্ষা দেওয়ার জন্য পরিবারের একজন অপর জনের প্রতি সালাম-আদান প্রধান করা জরুরি। যা ইসলামী পরিবার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ইসলামী হুকুম অহকাম যথাযথ পালনে পরিবারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশা রাখতে পারি।
অনেক সময় দেখা যায় বাহিরের লোকদের সাথে হাসি-খুশি অমায়িক ব্যবহার করছেন, কিন্তু ঘরে দিয়েছেন বদমেজাজি স্বভাব নিয়ে পরিবার তার রাগান্বিত দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যান। কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। এই স্বভাব পরিবারের সকলের জন্য মানসিক যন্ত্রনা হয়ে দাঁড়ায়। এই বদমেজাজী চরিত্র পরিত্যাগ করে ঘরে প্রবেশ কালে সালাম আদান প্রদান করে হাস্যজ্জল চেহারায় মায়া-মমতায় সুহাগ ভরা কথা-বার্তা বলুন।তাহলে পরিবারের সকলের মন সুখে শান্তিতে ভরে যাবে এবং রাব্বে কারিমের পক্ষ হতে অফুরন্ত রহমত লাভ করবেন।
পারিবারিক সম্পর্ককে মধুময় করার জন্য স্ত্রীর ও অনেক কর্তব্য রয়েছে,স্বামী বাড়ির বাহির থেকে ঘরে আসলে স্ত্রী হাসি মুখে সালাম দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো ,এক গ্লাস পানি নিয়ে আসুন আর সেবার জন্য এগিয়ে আসলে স্ত্রীর ব্যক্তিত্ব ক্ষতিগ্রস্থ হবে না বরং রাব্বে কারিম তোদের প্রতি দয়াপরায়ন হবেন।
পরিবারকে সুন্দর করে সাজাতে উভয়ে আলোচনার মাধ্যমে পরিবার সাজান,তাহলে পরিবারটাই শান্তিতে ভরপুর হয়ে যাবে। বিষেশ করে একে অপরের আইব অন্যের কাছে বর্ণনা করনা বরং প্রশংসা করুণ তাহলে সুন্দর পরিবার তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবিক যখন পরিবার পরিচালিত হবে তখন মানুষের চির শক্র শয়তান নানা ভাবে কুমন্ত্রনা দিয়ে থাকে,তাই শয়তানের প্ররোচনায়ন আসক্ত না হয়ে বরং রাব্বে কারিমের দিকে নিজেকে নিয়োজিত রাখাটাই মুসলিম পরিবারের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য।
পরিবারে কোন সমস্যা এলে বা কোন ধরনের ভূল বোঝাবুঝি দেখা দিলে ঠান্ডা মাথায় খোলা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করুন। একে অপরের উপর অভিযোগ দায়ের করাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজ সন্তানের সামনে একে অপরের সমালোচনা কঠোর ভাবে এড়িয়ে চলুন। এতে উভয়েই সন্তানের কাছে অপমানিত হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন এবং সন্তানের আদব শিখানোর যোগ্যতা হারাতে হবে না।
রাব্বে কারিম তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে ইরশাদ করেন-তোমাদের প্রত্যেকই দায়িত্বশীল আর দায়িত্ব সম্পর্কে প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে। সন্তান-সন্ততিই মা-বাবার এক মহান নিয়ামত। সন্তানের প্রতি মা-বাবার অনেক কর্তব্য রয়েছে যেমন-সন্তানের সুন্দর একটি নাম রাখতে হবে। তাদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। রাব্বে কারিম সুর্স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেন-মায়ের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সন্তানের দু‘বৎসর দুধ প্রাণ করানো।
রাসুলে পাক (সা:) এরশাদ করেন-শিশুর জন্য মায়ের দুধের ন্যায় আর কোন দুধ বরকত পূর্ণ হতে পারে না। রাসুল (সা:) এরশাদ করেন,বিবাহ হলো ঈমানের অর্ধেক বিবাহ হল আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতের প্রতি অমনোযোগী সে আমাহতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সম্মানিত করো এবং সুন্দর আদব সমূহ শিক্ষা দাও। তাই মধুর ব্যবহারে পরিবারের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই আমরা মুসলিম হিসেবে সবাই ইসলামী আদর্শ মোতাবিক জীবন যাপন পরিচালনা করি। আয় রাব্বে কারিম তুমি আমাদের কে তোমাকে খুশি রাজি করার পাশা-পাশি জীবনের প্রত্যেক পদ তোমার পথে চলার দাওফিক দান করুন।
মো:শামসুল ইসলাম সাদিক