ডালিমের উপকারিতা এবং এর আদি নিবাস কোথায়?

সাধারণত ডালিম বা আনারের রঙের মতোই দেখতে এই গাছের ফুল। তবে লাল রঙ ছাড়াও আরও দুই রঙের ফুল দেখতে পাওয়া যায়। গোলাপি রঙ এবং কমলা রঙ। গাছে ফুলগুলোকে দুইভাবে দেখতে পাওয়া যায়। কখনো একেবারে পৃথকভাবে একটা একটা ফুল আবার কখনও বেশ কয়েকটি ফুল একসাথে। আবার আনারের স্বাদেও রয়েছে বৈচিত্র্য। হালকা টক, হালকা মিষ্টি মেশানো টক এই দুই স্বাদের আনার রয়েছে।
ডালিম ফল কৃষি খাতের অন্যতম উদ্যানজাত একটি পণ্য। ডালিম ফলটি ইরানে অন্তত চার হাজার বছর আগে থেকে চাষ হয়ে আসছে। গবেষকদের বিশেষ করে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই মনে করেন ডালিম গাছের আদি নিবাস হলো ইরান।
ডালিম ফল রং এবং সাইজের দিক থেকেও বিভিন্ন প্রকারের রয়েছে। তবে এই রং কিংবা আকারগত বৈচিত্র্যের কারণে এর বৈশিষ্ট্য ও গুণে কোন পরিবর্তন হয় না-সব আনারেরই ওষুধি গুণাগুণ অভিন্ন রকমের।
খ্রিষ্টিয় দশম কিংবা একাদশ শতকের ইরানের কালজয়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও দার্শনিক বিশিষ্ট মনীষী আবু আলি সিনা বা ইবনে সিনা বলেছেন: মিষ্টি হোক কিংবা টকই হোক আনার যেন এক প্রজাতির চেয়ে অপর প্রজাতি অনেক বেশি মজার এবং পছন্দের। তিনি আরও বিশ্বাস করতেন যে, আনার বা ডালিম ফলের প্রতিটি অংশেরই আলাদা আলাদা ওষুধি গুণ রয়েছে।
ডালিম এবং ডালিমের যৌগের বৈশিষ্ট্যের উপর প্রচুর গবেষণা হয়েছে। এইসব গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে ডালিম বহু রোগের প্রতিরোধ ও চিকিত্সায় বেশ উপকারী। এছাড়াও ডালিমের খোসা, গাছের শেকড়, ফুল এবং ডালিমের বীজ-সবকিছুর ওষুধি গুণ থাকার কারণে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে এগুলো ব্যবহৃত হয়।
ডালিম অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর। ডালিম হেমাটোপোইটিক, ওরাল আলসার প্রতিরোধক,অ্যান্টি-ডায়রিয়াল এবং অ্যান্টি-প্যারাসিটিক বা পরজীবী প্রতিরোধে খুবই কার্যকর।
ডালিমের বীজে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকার কারণে হজমের জন্য এটি খুবই ভালো। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উচ্চ গুণমানের কারণে জীবাণু এবং ভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডালিমের জুড়ি মেলা ভার।
হাঁড়কে নরম করার রোগ রিকিটস্রোগ এবং স্নায়ুর দুর্বলতার চিকিত্সা করতে ডালিম বেশ কার্যকর। হতাশা, বিষন্নতা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার ক্ষেত্রেও ডালিম খুব উপকারী। ডালিম খেলে মানুষের ভেতরে এক ধরনের উৎফুল্ল ভাব ও উদ্দীপণা তৈরি হয়।
আনারের ওষুধি গুণ
ডালিম বা আনারের ওষুধি গুণ নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। গবেষণার ফলাফল হল এই ফলটি রোগ প্রতিরোধ করা এবং রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসা পদ্ধতির চিকিৎসকদের বিশ্বাস অনুযায়ী আনার ফলের ব্যাপক উপকারিতা এবং গুণের কারণে এটি হলো প্রাণদায়ী একটি মহৌষধ। কেননা এই ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-১ এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এর বাইরেও রয়েছে ভিটামিন বি-৯ এবং আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং সোডিয়ামের মতো খনিজ পদার্থও।
আনার রক্ত পরিষ্কারে সাহায্য করে। লিভারকে শক্তিশালী করে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। আনার অ্যাজমার মতো শ্বাসকষ্টের রোগের জন্যও ভালো কাজ করে। বুকের ব্যথাসহ অতিরিক্ত কাশি উপশমে খুবই উপকারী। হৃদরোগে যারা কষ্ট পাচ্ছেন তাদেরকে বেশি বেশি আনার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগণ।
ইরানের ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসায় এই আনার পিত্তথলির সমস্যা দূর করতে এবং কিডনিকে শক্তিশালী ও অধিক ক্রিয়াশীল করতে সাহায্য করে। এই আনারে রয়েছে অ্যান্টি ইউরিয়া এবং কোলেস্টেরল প্রতিরোধক গুণাগুণ। উচ্চ রক্তচাপ, প্রস্টেট ক্যান্সার, আলঝাইমারস, বার্ধক্য এবং স্থূলতা রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আনারের কার্যকর ভূমিকা পরীক্ষিত।
শরীরে বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার কারণে কোলন ক্যান্সারের মতো ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার মতো সমস্যাও প্রতিরোধ করে আনার।
আনারের রঙ খুব সহজে পরিষ্কার হয় না মানে উঠে যায় না। এ কারণে প্রাচীনকালে আনারের শাখা, শেকড়, ফুল, পাতা, আনারের খোসা ইত্যাদিকে চামড়া শিল্পে, সূতা রং করতে, পশম কিংবা কাপড় রঙীন করতে ব্যবহার করা হত। আজও আনারের খোসা ট্র্যাডিশনাল কালার তৈরির ক্ষেত্রে কাজে লাগান হয়। আনারের রসও প্রাকৃতিক রঙ হিসেবে ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। আনার দিয়ে বিচিত্র খাদ্যপণ্য থৈরি হয়। আনারের বিচি থেকে তৈরি তেল শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।

Reviews

20 %

User Score

1 ratings
Rate This

Sharing

Leave your comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।